সুন্দরবনের জনসংখ্যা ৪ মিলিয়নের বেশি কিন্তু এর বেশির ভাগই স্থায়ী জনসংখ্যা নয়।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে যেমন, ঠিক তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতেও সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি দেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এই বন কাঠের উপর নির্ভরশীল শিল্পে কাঁচামাল জোগান দেয়। এছাড়াও কাঠ, জ্বালানী ও মন্ডের মত প্রথাগত বনজ সম্পদের পাশাপাশি এ বন থেকে নিয়মিত ব্যাপকভাবে আহরণ করা হয় ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক। বৃক্ষপূর্ণ সুন্দরবনের এই ভূমি একই সাথে প্রয়োজনীয় আবাসস্থল, পুষ্টি উৎপাদক, পানি বিশুদ্ধকারক, পলি সঞ্চয়কারী, ঝড় প্রতিরোধক, উপকূল স্থিতিকারী, শক্তি সম্পদের আধার এবং পর্যটন কেন্দ্র।
এই বন প্রচুর প্রতিরোধমূলক ও উৎপাদনমূলক ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫১ শতাংশ জুড়ে সুন্দরবনের, বন থেকে আসা মোট আয়ে অবদান প্রায় ৪১ শতাংশ এবং কাঠ ও জ্বালানী উৎপাদনে অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ (বিশ্ব খাদ্য সংস্থা, ১৯৯৫)। অনেকগুলি শিল্প (যেমনঃ নিউজপ্রিন্ট, দেয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র) সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন অ-কাঠজাত সম্পদ এবং বনায়ণ কমপক্ষে আধা মিলিয়ন উপকূলবর্তী জনসংখ্যার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ সৃস্টি করেছে। উৎপাদনমূখী ভূমিকার পাশাপাশি সুন্দরবন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী জনসংখ্যা ও তাদের সম্পদের প্রাকৃতিক নিরাপত্তাবলয় হিসেবে ভূমিকা রাখে।
মানুষের বসবাস ও অর্থনৈতিক কাজে ব্যাপক ব্যবহার হওয়া সত্ত্বেও এখনো সুন্দরবনের ৭০ শতাংশের কাছাকাছি পরিমাণ বনভূমি টিকে আছে, ১৯৮৫ সালে এমন মত জানায় যুক্তরাজ্যের ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন (ও ডি এ)।
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যে বনজ সম্পদের স্থিতির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে প্রধানত দুইটি ম্যানগ্রোভ প্রাজাতির ক্ষেত্রে - সুন্দরী (Heritiera fomes) এবং গেওয়া। এই হ্রাসের পরিমাণ যথাক্রমে ৪০ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ (ফরেস্টাল ১৯৬০ এবং ও ডি এ ১৯৮৫)। তাছাড়া, মাছ ও কিছু অমেরুদন্ডী প্রাণী ব্যতীত অন্যান্য বন্যপশু শিকারের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেখানে জীব বৈচিত্র্য হ্রাসের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে (এ শতকে উল্লেখযোগ্য হল কমপক্ষে ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ১ প্রজাতির সরীসৃপ) এবং ফলশ্রুতিতে বাস্তুসংস্থানের মান হ্রাস পাচ্ছে (আই ইউ সি এন ১৯৯৪)